জীবনের গল্প, ভ্যান চালিয়ে সংসার চলে সপ্তমীর

জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার বিষ্ণুপুর গ্রামের বুধা মালীর মেয়ে সপ্তমী রানী। বিয়ের বয়স হবার আগেই যেতে হয় জয়পুরহাট জেলার কালাই উপজেলার বামন গ্রামে কাশীনাথের ছেলে বিটল মালীর সংসারে। সেখানে শুরু হয় নি”র্যা”তন।

বিয়ের সাত বছর পর তিন সন্তানকে নিয়ে চলে আসেন গবীর বাবার সংসারে। তাদের অভাব-অ’নটনের সংসারে হাল ধরেন সপ্তমী। শুরুতে পাড়ায় পাড়ায় পান বিক্রি করলেও পরে ভ্যান চালানো শুরু করেন। সেই থেকে এ ভ্যান চালিয়ে সংসার চলে তার।

স্থানীয়রা জানান, ২০০২ সালে একটা চায়না ফনিক্স বাইসাইকেল, আধা ভরি স্বর্ণ, ২০ হাজার টাকা ও ঘর সাজানোর আসবাবপত্র দিয়ে বিয়ে দেন সপ্তমী রানীকে। বিয়ের পর থেকে শুরু হয় শ্বশুরবাড়ির অমানবিক নি”র্যা”তন। ২০১৩ সালে তিন সন্তানকে নিয়ে একেবারে চলে আসেন হত দরিদ্র বাবার সংসারে।

অভাবের সংসারে বোঝা হতে চাননি সপ্তমী রানী, দুবেলা দুমুঠো খাবার সংগ্রহ ও তিন সন্তানকে মানুষ করতে পাড়ায় পাড়ায় পান বিক্রি শুরু করেন। এতেও সংসারে ‘নুন আনতে পান্তা ফুরায়’ অবস্থা। হাল ছেড়ে দেননি সপ্তমী। ২০১৫ সাল থেকে ভ্যান চালাতে শুরু করেন তিনি।

নি”র্যা”তনের বর্ণনা দিতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন সপ্তমী। তিনি বলেন, ‘প্রথম দিকে শ্বশুর আমাকে মা”রধ”র করত, তারপর আমার স্বামী বাবার পক্ষ নিয়ে লা’ঠি দিয়ে পে’টাতেন, জো’রে কাঁদ’লে মু’খে কাপড় গুঁ’জে দিয়ে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে সি’গারেট বা ম’শার কয়েলের ছ্যাঁ’ক দিতেন।

সপ্তমীর মা শেফালী রানী বলেন, ‘নি”র্যাত”ন সহ্য করে কখনো শ্বশুর বাড়ি আবার কখনো বাবার বাড়ি আসা যাওয়ার মধ্যে তিনটি সন্তানের জন্ম দেয় সপ্তমী। সন্তানদের কথা ভেবে ধীরে ধীরে সব ঠিক হয়ে যাবে বলে সপ্তমীকে স্বামীর বাড়িতে বার বার পাঠানো হলেও সুখী হয়নি সে।

সপ্তমী আরও বলেন, ‘আগে প্যাডেল ঘুরিয়ে ভ্যান চালাতাম, এখন ব্যাটারি চালিত ভ্যান চালাই। প্রতিদিন সকালে ভ্যান নিয়ে বাড়ি থেকে বের হই। জীবনের ঝুঁ’কি নিয়ে ভ্যান চালিয়ে ক্লান্ত হয়ে বাড়ি ফিরি। দিনে দুই-তিনশ’ টাকা কামাই করে বাড়ি ফিরি। সেই টাকা দিয়ে সংসার চালাই ও তিনটা ছেলে মেয়েকে পড়াশুনা করাই।’

সপ্তমী বলেন, ‘বড় ছেলে তৃতীয় শ্রেণি, মেঝ মেয়ে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। সাত বছরের ছোট মেয়েকে মানুষের মত মানুষ করার স্বপ্ন আমার। তিলকপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সেলিম মাহবুব বলেন, ‘সপ্তমী রানী বসত বাড়ি নেই, তাই প্রধান মন্ত্রীর তহবিল থেকে আবাসন প্রকল্পের একটি বাড়ি তৈরি করে দেওয়ার জন্য তার নামে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।