রিয়ারেন বয়স মাত্র দুই বছর। উঠানে ছোটাছুটি, এদিক-ওদিক দৌড়াদোড়ি আর খেলাধুলা করছে, আবার একফাঁকে মিষ্টির জন্য বায়না ধরে কান্না করছে। মায়ের কোলে উঠে মাকে আলিঙ্গন করছে।
মায়ের কাছে আবদার করছে বিভিন্ন খাবার ও খেলনার জন্য। এসব দেখে মা চোখে পানি ধরে রাখতে পারছেন না। অথচ রিয়ান জানে না তার মা উম্মে হাবিবা স্মৃতির কী হয়েছে।ঝিনাইদহ পৌর এলাকার পবহাটি গ্রামের মোল্লাপাড়া এলকার মৃত রজব আলী মোল্লার একমাত্র ছেলে রাইজুল ইসলাম।
বাবা মারা যাওয়ার পর সংসারের বোঝা মাথায় নিয়ে এলাকার গ্রিজ কারখানায় শ্রমিকের কাজ করে ভালোই চলছিল সংসার। মা, ছোট বোন, স্ত্রী ও দুই বছর বয়সী এক সন্তানকে নিয়ে তার সংসার। কিন্তু হঠাৎ স্ত্রীর অসুস্থতার খবরে ভেঙে পড়েন রাইজুল।
নিজের দারিদ্র্য আর অসহায়ত্বে কথা জানিয়ে রাইজুল জানান, তার স্ত্রী উম্মে হাবিবা স্মৃতি মাঝেমধ্যেই মাথায় ব্যথা অনুভব করতেন। তিনি বাজার থেকে ওষুধ এনে খাওয়াতেন। হঠাৎ ব্যথা বেড়ে যাওয়ায়
গত বছরের ১৯ নভেম্বর ঝিনাইদহ সমতা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস অ্যান্ড হাসপাতালের নিউরোলজি চিকিৎসক রাশেদ ইমাম জাহিদকে দেখান। তিনি প্রাথমিকভাবে দেখে দ্রুত ঢাকা নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন।
গত ১১ জানুয়ারি ঢাকার নিউরোসায়েন্স হাসপাতলে গেলে সেখান থেকে পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরীক্ষা করা হয় স্মৃতির। পরে রিপোর্ট দেখে চিকিৎসক জানান, স্মৃতির মাথায় ব্রেন টিউমার হয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব তার মাথায় অস্ত্রোপচার করাতে হবে।
এ বাবদ খরচ হবে প্রায় ১০ লাখ টাকা। এত টাকা জোগাড় করা রাইজুলের পক্ষে সম্ভব নয় ভেবে স্বামী-স্ত্রী ঢাকা থেকে ফিরে আসেন। রাজ্যের চিন্তা আর সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে হতাশায় পড়েন তারা।
রাইজুলের চাচাতো ভাই এস এম ছানাউল্লাহ সূর্য বলেন, ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তারা স্মৃতির এই অসহায়ের কথা প্রচার করেছেন। কিন্তু এখনো কোনো সাহায্যের দেখা পাননি। তিনি আরও বলেন, সরকারি-বেসরকারি ও বিত্তবানদের সাহায্য ছাড়া রাইজুলের পক্ষে চিকিৎসা ব্যয় করার কোনো ক্ষমতা নেই।
স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য ১০ লাখ টাকার প্রয়োজন। কিন্তু এত টাকা কোথায় পাবেন রাইজুল? এমনটা জানিয়ে রাইজুল বলেন, চিকিসৎক বলেছেন এক মাসের মধ্যে চিকিৎসা বা অস্ত্রোপচার করাতে না পারলে বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে।
এমনকি মৃত্যুও হতে পারে। আমার পক্ষে এত টাকা জোগাড় করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। সমাজের বিত্তবানরা যদি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন, তাহলে হয়তো আমার স্ত্রী সুস্থ হবে, সন্তানও এতিম হবে না।
উম্মে হাবিবা স্মৃতি জানান, আমার যদি দ্রুত চিকিৎসা না করা হয়, তাহলে হয়তো আমি মারা যাব। তখন আমার এই কোলের সন্তানটা অসহায়-এতিম হয়ে যাবে। সমাজের বিত্তবানদের কাছে আমার আকুল আবেদন, তারা যদি আমাকে সাহায্য করেন, তাহলে সময়মতো চিকিৎসা হলে আমি বেঁচে যাব। আমার সন্তানের জন্য হলেও আমি বাঁচতে চাই।